✍️ ভূমিকা
বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা, হস্তান্তর বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তির পর দলিল হলো মালিকানার প্রধান প্রমাণ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, দলিলে মালিকের নামের বানান বা তথ্য ভুলভাবে লেখা হয়। যেমন – নামের অক্ষর বাদ পড়া, অতিরিক্ত অক্ষর থাকা, বা ভুলভাবে উচ্চারণ লেখা ইত্যাদি।
এই ছোট ভুল ভবিষ্যতে নামজারি, খতিয়ান সংশোধন, কর পরিশোধ বা জমি বিক্রির সময় বড় জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই সময়মতো নাম ভুল সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরি।
⚖️ কেন দলিলের নাম ভুল হলে সমস্যা হয়?
দলিলে নাম ভুল থাকলে আইনগতভাবে জমির মালিকানা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে —
- নামজারি করতে দেরি হয় বা আবেদন বাতিল হতে পারে,
- ব্যাংক ঋণ বা জমির দান/বিক্রির ক্ষেত্রে বাধা আসে,
- উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়,
- জমি নিয়ে ভবিষ্যতে মামলার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
🧾 দলিলের নাম ভুলের সাধারণ ধরন
- বানান ভুল (যেমন: “আব্দুল” লেখা হয়েছে “আবদুল”)
- পদবি বা টাইটেল ভুল (যেমন: “মিয়া” বাদ পড়েছে)
- নামের অংশ বাদ পড়া বা বাড়তি থাকা
- ইংরেজি ও বাংলার মধ্যে অমিল
- পিতা/মাতার নামের ভুল সংযোজন
নাম ভুল সংশোধনের প্রক্রিয়া (Step-by-Step)
ধাপ ১: ভুল সনাক্ত করুন
প্রথমে দলিলের ভুল অংশ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করুন। উদাহরণ: নামের বানান, পিতার নাম, বা স্বামীর নাম ইত্যাদি।
ধাপ ২: দলিল লেখক বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করুন
যদি দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করুন।
তারা “Rectification Deed” (সংশোধনী দলিল) করার পরামর্শ দেবেন। এখানে কিছু সাব রেজিস্টারগনদের তালিকা দিয়ে দিলাম।
ধাপ ৩: সংশোধনী দলিল (Rectification Deed) তৈরি করুন
এটি একটি নতুন দলিল, যেখানে মূল দলিলের ভুল অংশ উল্লেখ করে সঠিক তথ্য প্রদান করা হয়।
সংশোধনী দলিলের জন্য প্রয়োজন হবে —
- মূল দলিলের কপি
- ভুল প্রমাণকারী জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ
- সঠিক নামসহ প্রমাণপত্র
- সাক্ষীর উপস্থিতি
ধাপ ৪: রেজিস্ট্রেশন করুন
সংশোধনী দলিল অবশ্যই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এতে মূল দলিলের মতোই অফিসিয়াল রেকর্ড আপডেট হয়।
ধাপ ৫: নামজারি অফিসে সংশোধনের আবেদন দিন
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, আপডেটেড দলিল নিয়ে ভূমি অফিস বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারীর কাছে নামজারি সংশোধনের আবেদন করতে হবে। নামজারি কি এবং এর প্রক্রিয়া ও খরচ দেখে নিতে পারেন ।
📑 প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- মূল দলিলের সত্যায়িত কপি
- এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন
- ভুল প্রমাণকারী সরকারি নথি
- দুইজন সাক্ষীর ছবি ও স্বাক্ষর
- আবেদনপত্র (নির্ধারিত ফরমে)
- দলিল ফি ও স্ট্যাম্প খরচের রসিদ
💰 খরচ ও সময়
| বিষয় | আনুমানিক খরচ | সময়সীমা |
|---|---|---|
| সংশোধনী দলিল লেখার ফি | ৳ ৫০০ – ১,০০০ | একই দিন |
| রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প | ৳ ৫০০ – ১,৫০০ | ২–৩ দিন |
| নামজারি সংশোধন | ৳ ২০০ – ৫০০ | ৭–১০ কার্যদিবস |
মোট সময়: প্রায় ১০–১৫ দিন
মোট খরচ: প্রায় ৳ ১,০০০ – ২,০০০ (অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে)
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- দলিল লেখককে তথ্য দেওয়ার আগে নিজের এনআইডি/জন্ম সনদ যাচাই করে নিন।
- বানান বা নামের অংশ সরকারি নথির সঙ্গে মিলিয়ে নিন।
- সংশোধন শেষে নতুন দলিলের একটি কপি নিরাপদে সংরক্ষণ করুন।
- রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডে আপডেট নিশ্চিত করুন।
সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: দলিলের নাম ভুল হলে কি নতুন দলিল করতে হবে?
👉 না, নতুন দলিল নয় — “সংশোধনী দলিল (Rectification Deed)” করলেই যথেষ্ট।
প্রশ্ন ২: নাম ভুল হলে আদালতে যেতে হয় কি?
👉 সাধারণ বানান ভুলের ক্ষেত্রে আদালতে যেতে হয় না। তবে মালিকানা বিতর্ক থাকলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৩: নাম সংশোধনের পর খতিয়ানেও কি পরিবর্তন হবে?
👉 হ্যাঁ, নামজারি অফিসে সংশোধনের আবেদন করলে নতুন খতিয়ানে আপডেট হয়।
উপসংহার
জমির দলিলে নামের ভুলকে কখনোই ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ এই ছোট ভুল ভবিষ্যতে মালিকানা প্রমাণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সময়মতো সংশোধন করলে আইনি ঝুঁকি থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায়।
তাই, যদি আপনার জমির দলিলে নামের বানান বা তথ্য ভুল থাকে, আজই সংশোধনের উদ্যোগ নিন — ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।






[…] […]