বাংলাদেশে জমির মালিকানা হস্তান্তর, দান, উত্তরাধিকার বা বিক্রয় সম্পন্ন হলে নামজারি একটি বাধ্যতামূলক প্রশাসনিক ধাপ। কিন্তু অনেক সময় ভুল তথ্য, আপত্তি, বা আইনি জটিলতার কারণে নামজারি বাতিল হয়ে যায়।
এই অবস্থায় অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন — কীভাবে পুনরায় নামজারি করা যায়, কাকে যোগাযোগ করতে হয়, বা আপিল করার নিয়ম কী।
আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত জানব, নামজারি বাতিল হলে করণীয় পদক্ষেপ, আইনি প্রক্রিয়া, এবং সমাধানের উপায়।
⚖️ নামজারি বাতিল হওয়ার সাধারণ কারণসমূহ:
- জমির মালিকানার প্রমাণপত্র অসম্পূর্ণ বা ভুল।
- আপত্তিকর পক্ষের অভিযোগ বা আপিল।
- দলিলে ত্রুটি বা অস্পষ্টতা।
- একই জমি একাধিক নামে নামজারি করার চেষ্টা।
- সরকারি বা আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ।
নামজারি বাতিল হলে করণীয় পদক্ষেপ:
১. বাতিলের কারণ জানুন
প্রথমেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি অফিস (AC Land Office) থেকে বাতিলের আদেশপত্র সংগ্রহ করুন।
এতে উল্লেখ থাকবে কেন নামজারি বাতিল হয়েছে — তা জানাই পুনঃপ্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।
২. আপিল বা পুনঃনামজারি আবেদন
যদি আপনি মনে করেন বাতিলের কারণ অযৌক্তিক, তাহলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (UNO) এর মাধ্যমে আপিল আবেদন করতে পারেন।
🕓 সময়সীমা: সাধারণত আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়।
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুনরায় যাচাই
- দলিল (মূল ও ফটোকপি)
- খতিয়ান ও নকশা
- পূর্বের নামজারি কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও ট্যাক্স রসিদ
সব তথ্য হালনাগাদ ও সঠিক আছে কি না যাচাই করুন।
৪. আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার
যদি প্রশাসনিক আপিলে সমাধান না আসে, তাহলে জেলা জজ আদালত বা ভূমি আদালতে মামলা করে নামজারি পুনর্বহালের আবেদন করা যায়।
৫. আইনি সহায়তা গ্রহণ
অভিজ্ঞ ভূমি আইনজীবীর পরামর্শ নিন। অনেক সময় ছোট আইনি ত্রুটি বা ডকুমেন্ট ভুলের কারণে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
অতিরিক্ত টিপস:
- নামজারি বাতিলের কপি এবং আপিলের রসিদ সংরক্ষণ করুন।
- অনলাইনে ভূমি সেবা পোর্টাল (land.gov.bd) থেকে আবেদনপত্রের অবস্থা ট্র্যাক করুন।
- একই জমি একাধিকবার নামজারি করতে যাবেন না — এতে আইনগত ঝুঁকি বাড়ে।
প্রাসঙ্গিক আইন ও বিধি:
- ভূমি নামজারি বিধিমালা, ২০১০
- ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল
- বাংলাদেশ ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৮৪
উপসংহার:
নামজারি বাতিল হওয়া মানেই মালিকানা হারানো নয় — বরং এটি একটি প্রশাসনিক জটিলতা যা সঠিক প্রক্রিয়ায় পুনঃনামজারি করে সমাধান করা সম্ভব।
যত দ্রুত সম্ভব কারণ জেনে যথাযথ আপিল বা আবেদন করুন এবং আইনজীবীর পরামর্শ নিন।





