পূর্বাহ্ণ ০৭:২৬, মঙ্গলবার, ১৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নামজারি কী? প্রক্রিয়া ও খরচ (২০২৫ আপডেট)

বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা, উত্তরাধিকার বা দান সংক্রান্ত যেকোনো লেনদেনের পর নামজারি একটি বাধ্যতামূলক ধাপ। নামজারি ছাড়া জমির মালিকানা আইনগতভাবে প্রমাণ করা যায় না।
এই পোস্টে আমরা জানব — নামজারি প্রক্রিয়া ও খরচ, নামজারি কী, কেন প্রয়োজন, কীভাবে আবেদন করতে হয়

⚖️ নামজারি কী?

নামজারি (Mutation) হলো জমির মালিকানায় পরিবর্তন ঘটলে সেই পরিবর্তনটি সরকারী রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া।
যেমন — আপনি জমি কিনলেন, দান পেলেন, বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেলেন — তখন আপনাকে ভূমি অফিসে নামজারি করতে হবে, যাতে নতুন মালিক হিসেবে আপনার নাম ভূমি রেকর্ডে যুক্ত হয়।

➡️ আইনগত ভিত্তি:
ভূমি রেকর্ড (Preparation and Maintenance) আইন, ২০১০ অনুযায়ী নামজারি করা বাধ্যতামূলক।


🧾 নামজারি কেন প্রয়োজন?

  • জমি সংক্রান্ত বিরোধ এড়াতে
  • জমির আইনি মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে
  • খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) পরিশোধ করতে
  • ভবিষ্যতে জমি বিক্রয়, উত্তরাধিকার বা ব্যাংক লোন নিতে

💻 নামজারি করার উপায়

বাংলাদেশে নামজারি করার দুটি উপায় আছে:

১️. ম্যানুয়াল পদ্ধতি (সরাসরি অফিসে)

  • স্থানীয় ভূমি অফিস (AC Land Office) এ গিয়ে আবেদন করতে হয়।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
  • তদন্ত ও শুনানির পর রেকর্ডে নতুন মালিকের নাম যুক্ত হয়।

২️. অনলাইন পদ্ধতি (e-Namjari)

  • ওয়েবসাইটে যান: https://mutation.land.gov.bd/
  • লগইন/রেজিস্ট্রেশন করুন
  • “নতুন আবেদন” সিলেক্ট করে জমির তথ্য ও দলিল আপলোড করুন
  • আবেদন ফি অনলাইনে পরিশোধ করুন (bKash, Nagad, Rocket ইত্যাদি)
  • AC Land অফিস থেকে SMS/ইমেইলে স্ট্যাটাস পাবেন
Online land mutation process in Bangladesh – submitting namjari application on land.gov.bd

📄 নামজারি করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  1. বিক্রয়/দান/উত্তরাধিকার দলিলের কপি
  2. পরিশোধিত খাজনার রশিদ
  3. পূর্বের খতিয়ান বা রেকর্ড (CS/RS/BS)
  4. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  5. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  6. আবেদন ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র


💰 নামজারি খরচ (২০২৫ অনুযায়ী)

বিষয়খরচ (টাকা)
আবেদন ফি25/-
প্রসেসিং ফি100/-
রেকর্ড সংশোধন ফি50/-
সেবামূল্য / সরকারি খরচ50/-
মোট আনুমানিক খরচ২০০–২৫০ টাকা

⏱️ নামজারি সম্পন্ন হতে সময়

সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন হয়।
তবে তদন্ত বা শুনানি জটিল হলে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।

📱 নামজারি স্ট্যাটাস চেক করার নিয়ম

  1. https://mutation.land.gov.bd/ সাইটে যান
  2. “আবেদনের অবস্থা” তে ক্লিক করুন
  3. Application ID বা Tracking Number দিন
  4. “Search” করলে বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন

⚖️ নামজারি না করলে কী সমস্যা হতে পারে?

  • জমির উপর আইনি মালিকানা প্রমাণ করা যাবে না
  • ভূমি কর বা খাজনা জমা দেওয়া যাবে না
  • ভবিষ্যতে জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না
  • উত্তরাধিকার সূত্রে বিরোধ তৈরি হতে পারে

জেনে নিন নামজারি বাতিল হলে করণীয় এখানে ক্লিক করুন

উপসংহার

নামজারি হলো আপনার জমির মালিকানা আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ।
যত দ্রুত সম্ভব নামজারি সম্পন্ন করলে ভবিষ্যতে জটিলতা ও বিরোধ এড়ানো যায়।
এখন অনলাইন নামজারি সহজ — তাই বাড়িতে বসেই আবেদন করুন ও প্রক্রিয়া ট্র্যাক করুন।

Facebook
Pinterest
Reddit
WhatsApp
Print
মোঃ_আবুল_কালাম_আজাদ_vumi_jorip

মোঃ আবুল কালাম আজাদ

সাবেক প্রশিক্ষক, ময়নামতি সার্ভে ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা

Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
trackback

[…] নামজারি সংশোধনের আবেদন করতে হবে। নামজারি কি এবং এর প্রক্রিয়া ও খরচ দেখে নিতে পারেন […]

trackback

[…] ৩. নামজারি: একবার খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম অনুসারে নামজারি সম্পন্ন হলে, জমিটি আপনার নামে নথিভুক্ত হবে। ফলে, আপনি এটি ৯৯ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।নামজারি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করু নামজারি কি প্রক্রিয়া ও খরচ […]

আরো পড়ুন

বাংলাদেশে দণ্ড হওয়ার পর আপিলের নিয়ম অনেকের জানা থাকে না, বিশেষত যদি আসামি পলাতক অবস্থায় থাকেন। ফৌজদারি মামলার রায় ঘোষণার পরে কীভাবে আপিল করতে হয়, কোথায় আত্মসমর্পণ করতে হয়, এবং কোন আদালতে কীভাবে জামিন বা স্টে চাইতে হয়—এসব বিষয় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গাইডে দণ্ড হওয়ার পর আপিলের নিয়ম এবং পলাতক আসামির আইনগত করণীয় ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

নামজারি বাতিল হলে কী করবেন? জানুন নামজারি বাতিলের কারণ, আপিল করার নিয়ম, এবং আইনি করণীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত। ভূমি মালিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গাইড।

জমির দলিলে নাম ভুল হলে কী করবেন? এই পোস্টে জানুন নাম সংশোধনের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, যাতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়ানো যায়।