বাংলাদেশে দণ্ড হওয়ার পর আপিলের নিয়ম অনেকের জানা থাকে না, বিশেষত যদি আসামি পলাতক অবস্থায় থাকেন। ফৌজদারি মামলার রায় ঘোষণার পরে কীভাবে আপিল করতে হয়, কোথায় আত্মসমর্পণ করতে হয়, এবং কোন আদালতে কীভাবে জামিন বা স্টে চাইতে হয়—এসব বিষয় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গাইডে দণ্ড হওয়ার পর আপিলের নিয়ম এবং পলাতক আসামির আইনগত করণীয় ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মামলায় দণ্ড হওয়ার পর সাধারণভাবে আপিল করার নিয়ম
দণ্ড ঘোষণার পর প্রথম করণীয় হলো–
১. রায়ের সনদকপি সংগ্রহ (Certified Copy)
রায়ের কপি ছাড়া আপিল সম্ভব নয়। সাধারণত ৩–৭ দিনের মধ্যে কপি পাওয়া যায়।
২. আইনজীবীর সাথে পরামর্শ
দণ্ড কোন আদালত দিয়েছে তার ওপর নির্ভর করে আপিলের আদালত নির্ধারিত হয়—
| দণ্ড প্রদানকারী আদালত | আপিল করতে হবে |
|---|---|
| ম্যাজিস্ট্রেট আদালত | সেশনস জজ/জেলা জজ আদালত |
| সেশনস জজ আদালত | হাইকোর্ট বিভাগ |
| নারী-শিশু ট্রাইব্যুনাল / বিশেষ আদালত | হাইকোর্ট বিভাগ |
৩. আপিল মেমো ও বেল/স্টে আবেদন
আইনজীবী রায়ের ত্রুটি, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভুল, আইনগত যুক্তি ইত্যাদি উল্লেখ করে—
- আপিল পিটিশন
- জামিন আবেদন
- দণ্ড স্থগিত (Stay)
তৈরি করেন।
৪. ৩০ দিনের মধ্যে আপিল
আইনগতভাবে আপিল ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করা উত্তম।
⭐ আসামি যদি পলাতক থাকে, তবে নিয়ম বদলে যায়
এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পলাতক আসামি আদালতের চোখে ‘absconder’।
এ অবস্থায় আদালত তাকে আপিল করার অধিকার সহজে দেয় না।
পলাতক আসামির আপিল আদালত সাধারণত গ্রহণ করে না
কারণ:
- তিনি আদালতের অধীন নন
- রায় কার্যকর হতে দেননি
- বিচারিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেছেন
তাই আপিল করার আগে প্রথম ধাপ হলো—
পলাতক আসামির বাধ্যতামূলক করণীয়: আত্মসমর্পণ (Surrender)
দণ্ড প্রদানকারী আদালতে সশরীরে আত্মসমর্পণ করতেই হবে।
আত্মসমর্পণের পর আদালত—
- জামিন নিয়ে শুনানি করবে
- অথবা জেল হাজতে পাঠিয়ে পরবর্তী তারিখ দেবে
- এরপরই আপিল গ্রহণযোগ্য হবে
📌 হাইকোর্টেও একই নিয়ম
হাইকোর্ট সাধারণত জিজ্ঞেস করে—
“Lower Court এ আত্মসমর্পণ করেছেন?”
যদি না করেন → আপিল বা বেল প্রায়ই বাতিল হয়।
আত্মসমর্পণের পর আপিল করার ধাপগুলি
✔ ১. আত্মসমর্পণ
দণ্ড প্রদানকারী আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ।
✔ ২. জামিন আবেদন
আত্মসমর্পণের পর আদালত জামিন দিতে পারে। না দিলে—
✔ ৩. হাইকোর্টে জামিন + স্টে আবেদন
সেখানে সাধারণত সশরীরে যেতে হয় না; আইনজীবীই সব করেন।
✔ ৪. আপিল দাখিল
জামিন বা স্টে পাওয়ার পর আপিল গ্রহণযোগ্য হয় এবং রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হয়।
পলাতক আসামির ক্ষেত্রে সশরীরে হাজিরা লাগবে কি?
| পরিস্থিতি | হাজিরা লাগবে? |
|---|---|
| পলাতক অবস্থায় আপিল করতে চাইলে | ✔ হ্যাঁ, বাধ্যতামূলক |
| আত্মসমর্পণের পর আপিল শুনানি | ❌ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে না |
| হাইকোর্টে জামিন শুনানি | ❌ সাধারণত লাগে না |
| আদালত বিশেষভাবে নির্দেশ দিলে | ✔ লাগবে |
🙋♂️ সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. পলাতক আসামি কি হাইকোর্টে সরাসরি বেল চাইতে পারে?
খুব বিরল ক্ষেত্রে (জীবনহানির ভয়, বিশেষ পরিস্থিতি) পিটিশন করা যায়, তবে নিয়ম হলো lower court-এ আত্মসমর্পণ করা।
২. পলাতক থেকে আপিল করলে আদালত কী বলে?
আদালত সাধারণত:
“First surrender before the trial court”
এই নির্দেশ দেয়।
৩. আত্মসমর্পণ করলে কি সঙ্গে সঙ্গে জেলে নিতে পারে?
হ্যাঁ।
আদালত চাইলে জেল হাজতে পাঠাতে পারে এবং পরে বেল শুনানি নিতে পারে।
উপসংহার
দণ্ড হওয়ার পর আপিল করার আইনগত অধিকার সবার রয়েছে।
তবে আসামি পলাতক হলে আপিল গ্রহণ করা হয় না—প্রথমে আত্মসমর্পণ করতেই হবে।
আত্মসমর্পণের পর আইনজীবীর মাধ্যমে বেল, স্টে এবং আপিল—সব কিছুই করা যায়।
সঠিক আইনি পরামর্শ, সঠিক আদালত নির্বাচন এবং নির্দিষ্ট সময়ে আপিল দাখিল—এই তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপিলের প্রক্রিয়া ও হাইকোর্টের নিয়ম সম্পর্কে সরকারি তথ্য জানতে ভিজিট করুন:
👉 https://www.supremecourt.gov.bd/
যদি মামলা মিথ্যা হয় তাহলে আপনাকে কি করতে হবে ক্লিক করুন





