এই পোস্টে আপনি জানবেন খাস জমি কী, কাকে বলে এবং কীভাবে খাস জমি চেনা যায়। পাশাপাশি, কোন জমি খাস এবং কোনটি ব্যক্তিমালিকানাধীন তা সহজভাবে বোঝার পদ্ধতিও আলোচনা করা হবে।
অনেকে এখনো খাস জমির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে অবগত নন। তাছাড়া, খাস জমি চেনার নিয়ম বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও অনেকের ধারণা অস্পষ্ট। তাই, আজকের এই লেখায় ধাপে ধাপে খাস জমি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হবে।

খাস জমি কি
খাস জমি বলতে বোঝায় সরকারের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি, যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।
এসব জমি সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বন্দোবস্ত (lease) দেয় বা জনস্বার্থে ব্যবহার করে।
👉 সহজভাবে বললে —
যে জমির মালিক সরকার, সেই জমিই খাস জমি।
খাস জমির প্রকারভেদ
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী খাস জমি দুই প্রকার—
১️ কৃষি খাস জমি
এই জমিগুলো কৃষিকাজের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
জমিহীন কৃষকরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে কৃষি খাস জমি লিজ নিতে পারেন।
২️ অকৃষি খাস জমি
এই জমিগুলো কৃষি ব্যতীত অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, যেমন:
আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল ইত্যাদি।
খাস জমি চেনার উপায়
খাস জমি চেনার কয়েকটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি রয়েছে।
নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করলে সহজেই বুঝতে পারবেন জমিটি খাস কি না।
১. ৮ নম্বর রেজিস্টার তল্লাশি
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ৮ নম্বর রেজিস্টার তল্লাশি করুন।
এই রেজিস্টারে শুধুমাত্র সরকারের মালিকানাধীন জমিগুলোর তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
২. খতিয়ান ও দাগ নম্বর যাচাই
যদি খতিয়ান নম্বর ১ হয় এবং দাগ নম্বরের পাশে “খাস” বা “সরকারি” লেখা থাকে, তাহলে জমিটি খাস।
৩. মালিকানা যাচাই
জমির রেকর্ডে (Khatian/Mutation) “Government” বা “Bangladesh Government” লেখা আছে কি না দেখুন।
৪. স্থানীয় জিজ্ঞাসাবাদ
এলাকার মানুষদের জিজ্ঞেস করুন।
খাস জমি সাধারণত ফাঁকা, বড় আকারের, অথবা সরকারি ভবন/প্রতিষ্ঠান থাকে তাতে।
৫. ডিজিটাল রেকর্ড যাচাই
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ভূমি সেবা পোর্টাল থেকে খতিয়ান ও জমির ধরন অনলাইনে দেখা যায়।
👉 land.gov.bd
সরকারি খাস জমির বৈশিষ্ট্য
সরকারি খাস জমির কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যা দেখে সহজেই খাস জমি চিহ্নিত করা সম্ভব। নিম্নে এই বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করে দেয়া রয়েছে।
- জমির মালিকানা সরকারের নামে
- ব্যক্তিগত মালিকানা নেই
- জেলা প্রশাসকের অধীনে সংরক্ষিত থাকে
- সাধারণত ফাঁকা বা সরকারি স্থাপনা থাকে
- কোনো খাজনা দিতে হয় না
- সরকারি প্রকল্প বা জনসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হয়
জেনে নিন জমির খাজনা চেক করার নিয়ম ২০২৫
খাস জমি কি বিক্রি করা যায়
না, খাস জমি বিক্রি করা যায় না। কারণ খাস জমির মালিকানা সরকারের। এসকল জমি বিভিন্ন জনস্বার্থে ব্যবহার করা হয়। খাস জমি বিক্রি করার চেষ্টা করলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেক অসাধু ব্যক্তি সরকারি খাস জমি নিজের বলে বিক্রি করার চেষ্টা করে থাকেন।
এজন্য, জমি কেনার পূর্বে খাস জমি চেনার উপায় জানতে হবে। তাহলে, ভুল করে সরকারি খাস জমি কিনে ফেলার ভয় থাকবে না। খাস জমির মালিকানা এবং অধিকার সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের। তাই, এই ধরনের জমি অবৈধভাবে অধিগ্রহণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
খাস জমি দলিল করার নিয়ম
যদি কোনো ব্যক্তি খাস জমি নিজের নামে নিতে চান, তবে নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে হয়—
- জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে।
- আবেদনকারীকে “জমিহীন” বা সর্বোচ্চ ১০ শতক জমির মালিক হতে হবে।
- অনুমোদন পেলে বন্দোবস্ত দলিল (lease deed) রেজিস্ট্রি করতে হয়।
- এরপর মিউটেশন ও খতিয়ান রেকর্ডে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
👉 বর্তমানে কৃষি খাস জমি একজন ভূমিহীন পরিবারকে সর্বোচ্চ ১.৫ একর পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে (নীতি : ১৯৯৭ / ২০২৫ আপডেট অনুযায়ী)।
খাস জমি কারা লিজ নিতে পারবে
বাংলাদেশের নাগরিক যেকোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমোদনে সর্বোচ্চ ১০০ শতক পর্যন্ত জমি
সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য লিজে নিতে পারেন।
লিজের ধরন:
অকৃষি খাস জমি → আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক বা জনসেবা কাজে
কৃষি খাস জমি → কৃষিকাজের জন্য
উপসংহার
খাস জমি সরকারের সম্পত্তি — এটি বিক্রয়যোগ্য নয়।
তবে সরকার জনস্বার্থে বা ভূমিহীনদের মাঝে ন্যায্যভাবে বন্দোবস্ত দিতে পারে।
তাই জমি কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করুন:
“জমিটি খাস কিনা?”
এবং প্রয়োজনে ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের সাহায্য নিন।





